পাতি মাছরাঙা বা ছোট মাছরাঙা Coraciiformes বর্গের এবং (Alcedo atthis) (ইংরেজি Common Kingfisher) আলসেডিনিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত আলসেডো গণের অন্তর্গত রঙচঙে ক্ষুদে মৎস্যশিকারী পাখি।পাতি মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আত্তিসের মাছরাঙা যা এসেছে লাতিন শব্দ: alcedo = মাছরাঙা, atthis = আত্তিস, লেসবস নগরীর সুন্দরী, কবি সাফোর প্রিয়জন থেকে।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৯০ প্রজাতির মাছরাঙা দেখা যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ১২ প্রজাতির মাছরাঙ্গার অস্তিত্ব রয়েছে। নিচের ছবিটিতে এদের বিবরণ দেওয়া হলঃ
পাতি মাছরাঙা ছোট আকারের পাখি । এরা লম্বায় ১৬ সে মি হয়ে থাকে। পাখার বিস্তৃতি ২৫ সে মি এবং এদের ওজন ৩৪ থেকে ৪৬ গ্রাম হতে পারে। এদের প্রায় সবারই দেহের তুলনায় মাথা বড়, লম্বা, ধারালো ও চোখা চঞ্চু, খাটো পা ও খাটো লেজ রয়েছে। বেশিরভাগ মাছরাঙার দেহ উজ্জ্বল রঙের আর স্ত্রী-পুরুষে সামান্য ভিন্নতা দেখা যায়। অধিকাংশ মাছরাঙা বিষুবীয় অঞ্চলে বসবাস করে এবং এদের বড় একটা অংশকে কেবলমাত্র বনে দেখা যায়। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশংকাহীন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এরা Least Concern বা আশংকাহীন বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয় ।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্বচ্ছ ও ধীরগতির ঝর্ণা, নদী ও লেকের পানিতে পাতি মাছরাঙাকে দেখতে পাওয়া যায়। ছোট ঝোপঝাড়ের ডালে মাছরাঙা বসে থাকে। মাছরাঙ্গা পাখি অত্যন্ত শান্ত ও ধৈর্য্যশীল। জলাশয়ের কাছাকাছি কোন ডালে বা কোন তারে বসে থাকে, নড়াচড়াও কম করে। মাছ কিভাবে আছে সেখানেই তার দৃষ্টি। আর যখনই মাছের অবস্থান টের পায় সাথে সাথে তীর গতিতে মাছের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাছ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাছরাঙা তাকে ধরে ফেলে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় পাখিটার ঠোঁটের ফাঁকে ছোট্ট একটি মাছ ঝটপট করছে। এরা অনেক ধরনের প্রাণী শিকার করে, তবে তার বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে মাছ। এরা সাধারণত ডালে থেকে ডাইভ দিয়ে পানির মধ্যে থেকে মাছ শিকার করে। অন্যান্য শিকারের মধ্যে রয়েছে পোকামাকড়, ব্যাঙ, সরীসৃপ, পাখি এমনকি ছোট আকারের স্তন্যপায়ী। পানির নিচে শিকার দেখার জন্য এরা বিশেষভাবে অভিযোজিত।
এদের প্রজনন মৌসুম শুরু হয় শরৎকালে। এসময় এরা জোড় বেঁধে একত্রে থাকে। বর্গের অন্যসব সদস্যদের মত মাছরাঙারাও গর্তে বাসা করে। সাধারণত জলাশয়ের পাশে খাড়া পাড়ের গর্তে এরা বাসা বানায়। বাসা বানানোর জন্য এরা একে অপরকে সাহায্য করে। বাসা তৈরি হলে স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে। এরা একসাথে ৫ থেকে ৭ টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে চকচকে সাদা। বাবা ও মা পাখি উভয়ই ডিমগুলিতে দিনের বেলা তা দেয়। তবে রাতের বেলায় শুধু মা পাখি ডিমগুলিতে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৯ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। বাচ্চারা আরো ২৪ থেকে ২৫ দিন বাসায় থাকে।