মিষ্টি গলার গানে সে মাতিয়ে রাখে প্রকৃতি। ফুলের মাঝে ঠোঁট গুঁজে রসপানের চেষ্টায় ব্যস্ত দিন কাটায়। আমাদের দেশের সব ছোট্টপাখিদের মধ্যে অন্যতম এটি। টুনটুনি থেকেও আকারে অনেক ছোট এবং ওজনেও কম। ওজন এতটাই কম যে এদের লম্বা ঠোঁট আর লেজটি বাদ দিলে এর দেহের দৈর্ঘ্য দেড় ইঞ্চিরও কম এবং ওজন এক চামচ চিনির চেয়ে বেশি নয়। গহীন জঙ্গল থেকে শুরু করে গাছগাছালিপূর্ণ আমাদের বসতবাড়ির আশে-পাশে প্রায়ই তার দেখা মেলে।
প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও রঙের ভিন্নতার জন্য সব পাখির থেকে একে আলাদা করে চেনে নেয়া যায়। দীর্ঘ ঠোঁটসমৃদ্ধ এ পাখির নাম 'মৌটুসি'। তেল চিকচিকে বর্ণালী উজ্জ্বল পালক এবং লম্বা বাঁকানো ঠোঁটের কারণে মৌটুসিরা সহজেই নজর কাড়ে। বাড়ির আশপাশের ঝোপের ভেতর থেকে উচ্চৈঃস্বরে 'সুইটি-টি-চি-চিউ... টিউসি-টিটসুইটি-সুইটি... সুইটি-টি-চি-চিউ...' সুরে শিস দেয়। এরা অত্যন্ত চঞ্চল ও ফুর্তিবাজ স্বভাবের। দিনের বেশির ভাগ সময় গাছের শাখা-প্রশাখায় নেচে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। মৌটুসি পাখির একটি বিশেষ ক্ষমতা হলো এরা হেলিকপ্টারের মত খাড়া হয়ে উড়তে পারে। যা ‘হামিং বার্ড’ ছাড়া আর কোনও পাখির পক্ষে সম্ভব নয়। ডানায় বাতাস ভর করে না বলে অন্যান্য পাখিরা কখনোই খাড়া হয়ে উড়তে পারে না।
প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও রঙের ভিন্নতার জন্য সব পাখির থেকে একে আলাদা করে চেনে নেয়া যায়। দীর্ঘ ঠোঁটসমৃদ্ধ এ পাখির নাম 'মৌটুসি'। তেল চিকচিকে বর্ণালী উজ্জ্বল পালক এবং লম্বা বাঁকানো ঠোঁটের কারণে মৌটুসিরা সহজেই নজর কাড়ে। বাড়ির আশপাশের ঝোপের ভেতর থেকে উচ্চৈঃস্বরে 'সুইটি-টি-চি-চিউ... টিউসি-টিটসুইটি-সুইটি... সুইটি-টি-চি-চিউ...' সুরে শিস দেয়। এরা অত্যন্ত চঞ্চল ও ফুর্তিবাজ স্বভাবের। দিনের বেশির ভাগ সময় গাছের শাখা-প্রশাখায় নেচে বেড়ায়। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। মৌটুসি পাখির একটি বিশেষ ক্ষমতা হলো এরা হেলিকপ্টারের মত খাড়া হয়ে উড়তে পারে। যা ‘হামিং বার্ড’ ছাড়া আর কোনও পাখির পক্ষে সম্ভব নয়। ডানায় বাতাস ভর করে না বলে অন্যান্য পাখিরা কখনোই খাড়া হয়ে উড়তে পারে না।
মৌটুসিদের খাদ্য হচ্ছে ফুলের মধু, পরাগ, পাপড়ি আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকা মাকড়। সে জন্য ঠোঁটের আকৃতি লম্বা আর সুঁচালো। লম্বা ঠোঁট ফুলের পাপড়ির ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়ে এরা ফুলের গোড়ায় সঞ্চিত মধু চুষে খায়। মৌটুসিদের বাসার নির্মাণ কৌশল সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এরা গাছের ডাল, কাণ্ড আর পাতার চিকন শক্ত আঁশ, মাকড়সার জাল, তুলো, নরম পালক দিয়ে বুনে ছোট্ট অথবা লম্বাটে বাসা বানায়। যা ছোট ঝোপঝাড় আর পাতার আড়ালে লুকানো অবস্থায় গাছের ডালে ঝুলে থাকে। বাসার মুখটা থাকে ওপরের দিকে। অতি ক্ষুদ্র নীলচে এবং খয়েরি ফুটকিযুক্ত প্রজাতিভেদে বর্ণালী ডিম দেয় বাসায় দুটো থেকে তিনটে। এই পাখির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না। এর মধ্যে লেজ প্রায় ৩ সেন্টিমিটার এবং ঠোঁট ১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার থেকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
বনের বিশাল মহীরুহের সাময়িক ফুলশয্যার চেয়ে পরগাছার অকৃপণ পুস্পসম্ভারই মৌটুসির বেশি পছন্দ। জেসব গাছের শীর্ষে পরগাছার বাড়বাড়ন্ত, সেখানেই চলে এর নিত্য আনাগোনা। প্যারাবন ছাড়াও পাহাড়ি বোন এবং শাল্বনের পরগাছাতেও পাখিটি দেখা যায়। ছোট ছোট মাকড়শা, পোকামাকড় ও ফুলের মধু খেয়েই এ পাখি বেঁচে থাকে। মধুর মত হাই ক্যালরি আহার্য আহার্য এ পাখির ধাবমান জীবনের ক্ষুদ্র চাকাটি ঘুরানোর জন্য অপরিহার্য। ফুলের গভীরে জমানো মধু টেনে তোলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে এর বাঁকানো ঠোঁট ও লম্বা জিহবা।
বনের বিশাল মহীরুহের সাময়িক ফুলশয্যার চেয়ে পরগাছার অকৃপণ পুস্পসম্ভারই মৌটুসির বেশি পছন্দ। জেসব গাছের শীর্ষে পরগাছার বাড়বাড়ন্ত, সেখানেই চলে এর নিত্য আনাগোনা। প্যারাবন ছাড়াও পাহাড়ি বোন এবং শাল্বনের পরগাছাতেও পাখিটি দেখা যায়। ছোট ছোট মাকড়শা, পোকামাকড় ও ফুলের মধু খেয়েই এ পাখি বেঁচে থাকে। মধুর মত হাই ক্যালরি আহার্য আহার্য এ পাখির ধাবমান জীবনের ক্ষুদ্র চাকাটি ঘুরানোর জন্য অপরিহার্য। ফুলের গভীরে জমানো মধু টেনে তোলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে এর বাঁকানো ঠোঁট ও লম্বা জিহবা।
শ্যাওলা ও শুকনো পাতা দিয়ে লম্বা থলের মত বাসা তৈরি করার কাজেও এর চঞ্জু বিশেষভাবে দক্ষ। বর্ষাকালে এই বাসায় স্ত্রী পাখিটি তিনটি লালচে ডিম পাড়ে। এরা ঝোপ ও গাছে পাতা, বাকল, ঘাস মাকড়সার জালে আবৃত করে থলের মত ছোট্ট বাসা তৈরি করে। তবে মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাপিয়া অর্থাৎ এশীয় শ্যামা পাপিয়া, বেগুনি পাপিয়া, এশীয় ফিঙে পাপিয়াসহ প্রভৃতি পাখি এদের বাসাতেই লুকিয়ে ডিম পাড়ে। হঠাৎই এসে ওরা বাসাটাকে বাঁকা করে মৌটুসির ডিমগুলো মাটিতে ফেলে দেয়া। তারপর নিজেরা ডিম পেড়ে চলে যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো সার্থক শক্তিশালী পাখি অর্থাৎ যারা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে রয়েছে তাদের বাসাতেই কিন্তু কোকিল, পাপিয়া, ফিঙে এরা ডিম পাড়ে। এতো করে দু’জনেই ছানা জন্ম নেবার সুযোগ সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে ছানাকে খাওয়ার জন্য সে ক্ষুদ্র পোকাও সংগ্রহ করে খায়।
যেসব প্রজাতির মৌটুসি পাখি আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে চুনিমুখো মৌটুসি, সিদুরে হলুদ মৌটুসি, নীলটুনি, সিঁদুরে লাল মৌটুসি, বেগুনি-গলা মৌটুসি পাখি, মাকড়সার মৌটুসি উল্লেখযোগ্য।
যেসব প্রজাতির মৌটুসি পাখি আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে চুনিমুখো মৌটুসি, সিদুরে হলুদ মৌটুসি, নীলটুনি, সিঁদুরে লাল মৌটুসি, বেগুনি-গলা মৌটুসি পাখি, মাকড়সার মৌটুসি উল্লেখযোগ্য।
স্ত্রী মৌটুসির পিঠ অনুজ্জ্বল জলপাই সবুজ। গলা ও বুক হালকা লালচে-কমলা। গালে লাল রঙ থাকে না। পেট পুরুষ মৌটুসির মতই হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি উভয়ের চোখ লাল। ঠোঁট অপেক্ষাকৃত খাটো ও সোজা। ঠোঁটের রঙ কালচে। পা ও পায়ের পাতা সবজে-ধূসর। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারা অবিকল স্ত্রী মৌটুসির মত, কেবল দেহতলে হলুদ রঙ থাকে না। চুনিমুখো মৌটুসি ঃ 'চুনিমুখী মৌটুসি', ইংরেজি নাম : 'Ruby-cheeked Sunbird', বৈজ্ঞানিক নাম : Anthreptes singalensis। অত্যন্ত ক্ষুদ্রকায় চকচকে সবুজ বর্ণের পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১ সেন্টিমিটার, ডানা ৫.৩ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ৪.২ সেন্টিমিটার ও পা ১.৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ মৌটুসির মাথার চাঁদি, ঘাড়, পিঠ, কোমর ও লেজের উপরের আচ্ছাদক ধাতব সবুজ। জানা ও লেজ কালচে। রোদে এর গাল উজ্জ্বল লাল থেকে কিছুটা বেগুনি দেখায়। গলা ও বুক লালচে-কমলা, পেট হলুদ।
সিঁদুরে হলুদ মৌটুসিঃ সিঁদুরে হলুদ মৌটুসি (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnyris Cinnyris) যা টোনা বা টুনি হিসেবেও পরিচিত মৌটুসি জাতের পাখি। এর ইংরেজি নাম Mrs. Gould's sunbird. বিখ্যাত ব্রিটিশ পক্ষীবিদ জন গোল্ডের স্ত্রী এলিজাবেথ গোল্ডের নামে এই পাখির নামানুাসারে যিনি ছিলেন একজন চিত্রকর। বাহারি এই পাখির রঙের মেলা শুধু পুরুষ পাখি বা টোনার দেহেই দেখা যায়। সিঁদুরে হলুদ মৌটুসি গানের পাখি। এরা চমৎকার জিট্-জিট্ স্বরে গান গায়। বেশ চঞ্চল, বেশিক্ষণ এক জায়গায় থাকে না। বাতাসে ঢেউ খেলিয়ে আলোর ঝিলিকের মতো একগাছ থেকে আরেকগাছে এবং ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়।
সিঁদুরে হলুদ মৌটুসি পাখির ওজন মাত্র ছয় গ্রাম। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত লম্বায় মাত্র ১৪-১৫ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে লেজ চার ও ঠোঁট দুই সেন্টিমিটার। লেজ ছোট ও গোলাকার। পেট হালকা হলদে। মাথা ও মুখমণ্ডল ধূসর বা নীলচে ধূসর। অন্যদিকে, বাহারি টোনার মাথার চাঁদি, মুখমণ্ডল, কান-ঢাকনি ও গলা ধাতব নীল থেকে বেগুনি। মাথার পেছন, ঘাড়, পিঠ ও দেহের ওপরটা সিঁদুরে লাল। ডানার ওপরটা জলপাই। বুক-পেট ও লেজের নিচের দিক হলুদ। লেজের পালক নীল। এদের চোখ বাদামি রঙের। ঠোঁট, পা ও নখ কালো।
সিঁদুরে হলুদ মৌটুসি পাখির ওজন মাত্র ছয় গ্রাম। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত লম্বায় মাত্র ১৪-১৫ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে লেজ চার ও ঠোঁট দুই সেন্টিমিটার। লেজ ছোট ও গোলাকার। পেট হালকা হলদে। মাথা ও মুখমণ্ডল ধূসর বা নীলচে ধূসর। অন্যদিকে, বাহারি টোনার মাথার চাঁদি, মুখমণ্ডল, কান-ঢাকনি ও গলা ধাতব নীল থেকে বেগুনি। মাথার পেছন, ঘাড়, পিঠ ও দেহের ওপরটা সিঁদুরে লাল। ডানার ওপরটা জলপাই। বুক-পেট ও লেজের নিচের দিক হলুদ। লেজের পালক নীল। এদের চোখ বাদামি রঙের। ঠোঁট, পা ও নখ কালো।
নীলটুনিঃ নীলটুনি (Cinnyris asiaticus) (ইংরেজি: Purple Sunbird), দুর্গা টুনটুনি বা মধুচুষকি নেকটারিনিইডি (Nectariniidae) পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত একটি ক্ষুদ্রকায় মধুপায়ী পাখি। এদের মধু চুষকি নামেও ডাকা হয়।
মৌটুসী প্রজাতির পাখিদের মধ্যে নীলটুনিরাই সব চাইতে সুদর্শন। এদের পুরুষটির গায়ের রং উজ্জ্বল এবং চকচকে নীল। ঘাড়ের কাছে কিছু পালক উজ্জ্বল সবুজ আর মেয়ে পাখিটির পালক উজ্জ্বল বাদামি আর হালকা সবুজের মিশেল। এদের মধু চুষকি নামেও ডাকা হয়। এরা মূলত ফুলের মধু খেতেই বেশি ভালবাসে। এদের ঠোঁট লম্বা এবং অগ্রভাব কিছুটা বাঁকানো। ঠোঁটের রংও কুচকুচে কালো। দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১০ সেন্টিমিটার, যার লেজ প্রায় ৩.৩ সেন্টিমিটার এবং ঠোঁট ২ সেন্টিমিটার। নীল টুনিরা আট থেকে বার বছর পর্যন্ত বাঁচে। শীত ও বসন্তই প্রধানত নীলটুনির প্রজনন কাল। মোটামুটি সব ঋতুতে প্রজনন হলেও বসন্তকালে শতকরা ৬৫, শীতে শতকরা ২৩ এবং অন্যান্য ঋতুতে শতকরা ১২ ভাগ প্রজনন ঘটে।
এরা বাসা বাঁধে ছোট গাছে। অনেক সময় মাটি থেকে ৭০-৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায়ও বাসা বাঁধতে দেখা যায়। বাসা বানানোর দায়িত্ব স্ত্রী পাখির ওপরই বর্তায়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। বাসার জায়গা পছন্দ করা এবং বাসা তৈরির পুরো দায়িত্ব স্ত্রী নীলটুনির। পুরুষ টুনি মাঝে মাঝে এসে কাজ তদারক করে। স্ত্রী টুনি দু-তিনটি ধূসর বা সবুজাভ সাদা ডিম পাড়ে। এর ওপর থাকে বাদামি ও বেগুনী ছোপ। স্ত্রী টুনি বাসায় বসে যখন ডিমে তা দেয়, তার লম্বা ছুঁচালো ঠোঁটটি দরজার মুখে বেরিয়ে থাকে। পুরুষ টুনি কখনোই ডিমে তা দেয় না। ডিম ফোটে ১৪-১৫ দিনে। তখন পুরুষ টুনি ক্ষণে ক্ষণে ডাকতে থাকে। স্ত্রী পুরুষ উভয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়। ছানা ১৬-১৭ দিনে বড় হয় এবং বাসা ছাড়ে। বাসা ছাড়ার পরও এরা সপ্তাহ দুয়েক বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকে। একসময় নিজেরাই ঘর বাঁধে। এরা বছরে দুবার ডিম পাড়ে।
নীলটুনি গানের পাখি। পুরুষ টুনি চমৎকার সুরে গান গায়। ভোরে সব পাখির আগে এরা মধুর কণ্ঠে ঘুমভাঙানি গান গেয়ে ওঠে। এরা মিষ্টিমধুর চি-হুইট-চি-হুইট-চি-হুইট স্বরে গান করে। যতটুকু পাখি, আওয়াজ তার তুলনায় বেশ জোরালো। স্ত্রী টুনি সাধারণত নীরব, স্বরও বেশ কর্কশ। মধু পানে মগ্ন নীলটুনি হামিং বার্ডের মতো এরাও বাতাসে স্থির থেকে উড়তে পারে। বাতাসে ঢেউ খেলিয়ে আলোর ঝিলিকের মতো এগাছে-ওগাছে, এ ফুল থেকে ও ফুলে উড়ে উড়ে মধু পান করে। খুব চঞ্চল। ফুলের বোঁটার ওপর বসে বাদুড়ের মতো ঝুলে পড়ে মধু পান করে। সচরাচর একাকি বা জোড়ায় অথবা অন্য পাখি যেমন ফুলঝুরি, ফিঙে, পাতা বুলবুলি, বুলবুলি বা চটকের সাথে দলে দলে ঘুরে বেড়ায়। মূলত মধু পান করে তবে সঙ্গে কিছু পোকামাকড়ও খায়। আর যখন মধুর অভাব দেখা দেয় তখন পুরোপুরি পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে।
মৌটুসী প্রজাতির পাখিদের মধ্যে নীলটুনিরাই সব চাইতে সুদর্শন। এদের পুরুষটির গায়ের রং উজ্জ্বল এবং চকচকে নীল। ঘাড়ের কাছে কিছু পালক উজ্জ্বল সবুজ আর মেয়ে পাখিটির পালক উজ্জ্বল বাদামি আর হালকা সবুজের মিশেল। এদের মধু চুষকি নামেও ডাকা হয়। এরা মূলত ফুলের মধু খেতেই বেশি ভালবাসে। এদের ঠোঁট লম্বা এবং অগ্রভাব কিছুটা বাঁকানো। ঠোঁটের রংও কুচকুচে কালো। দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১০ সেন্টিমিটার, যার লেজ প্রায় ৩.৩ সেন্টিমিটার এবং ঠোঁট ২ সেন্টিমিটার। নীল টুনিরা আট থেকে বার বছর পর্যন্ত বাঁচে। শীত ও বসন্তই প্রধানত নীলটুনির প্রজনন কাল। মোটামুটি সব ঋতুতে প্রজনন হলেও বসন্তকালে শতকরা ৬৫, শীতে শতকরা ২৩ এবং অন্যান্য ঋতুতে শতকরা ১২ ভাগ প্রজনন ঘটে।
এরা বাসা বাঁধে ছোট গাছে। অনেক সময় মাটি থেকে ৭০-৮০ সেন্টিমিটার উচ্চতায়ও বাসা বাঁধতে দেখা যায়। বাসা বানানোর দায়িত্ব স্ত্রী পাখির ওপরই বর্তায়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। বাসার জায়গা পছন্দ করা এবং বাসা তৈরির পুরো দায়িত্ব স্ত্রী নীলটুনির। পুরুষ টুনি মাঝে মাঝে এসে কাজ তদারক করে। স্ত্রী টুনি দু-তিনটি ধূসর বা সবুজাভ সাদা ডিম পাড়ে। এর ওপর থাকে বাদামি ও বেগুনী ছোপ। স্ত্রী টুনি বাসায় বসে যখন ডিমে তা দেয়, তার লম্বা ছুঁচালো ঠোঁটটি দরজার মুখে বেরিয়ে থাকে। পুরুষ টুনি কখনোই ডিমে তা দেয় না। ডিম ফোটে ১৪-১৫ দিনে। তখন পুরুষ টুনি ক্ষণে ক্ষণে ডাকতে থাকে। স্ত্রী পুরুষ উভয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়। ছানা ১৬-১৭ দিনে বড় হয় এবং বাসা ছাড়ে। বাসা ছাড়ার পরও এরা সপ্তাহ দুয়েক বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকে। একসময় নিজেরাই ঘর বাঁধে। এরা বছরে দুবার ডিম পাড়ে।
নীলটুনি গানের পাখি। পুরুষ টুনি চমৎকার সুরে গান গায়। ভোরে সব পাখির আগে এরা মধুর কণ্ঠে ঘুমভাঙানি গান গেয়ে ওঠে। এরা মিষ্টিমধুর চি-হুইট-চি-হুইট-চি-হুইট স্বরে গান করে। যতটুকু পাখি, আওয়াজ তার তুলনায় বেশ জোরালো। স্ত্রী টুনি সাধারণত নীরব, স্বরও বেশ কর্কশ। মধু পানে মগ্ন নীলটুনি হামিং বার্ডের মতো এরাও বাতাসে স্থির থেকে উড়তে পারে। বাতাসে ঢেউ খেলিয়ে আলোর ঝিলিকের মতো এগাছে-ওগাছে, এ ফুল থেকে ও ফুলে উড়ে উড়ে মধু পান করে। খুব চঞ্চল। ফুলের বোঁটার ওপর বসে বাদুড়ের মতো ঝুলে পড়ে মধু পান করে। সচরাচর একাকি বা জোড়ায় অথবা অন্য পাখি যেমন ফুলঝুরি, ফিঙে, পাতা বুলবুলি, বুলবুলি বা চটকের সাথে দলে দলে ঘুরে বেড়ায়। মূলত মধু পান করে তবে সঙ্গে কিছু পোকামাকড়ও খায়। আর যখন মধুর অভাব দেখা দেয় তখন পুরোপুরি পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে।
সিঁদুরে লাল মৌটুসিঃ
পাখির বাংলা নাম : ‘সিঁদুরে মৌটুসি’, ইংরেজি নাম: Crimson Sunbird, বৈজ্ঞানিক নাম: Aethopyga siparaja। এরা ‘সিঁদুরে লাল মৌটুসি’ নামেও পরিচিত। পুরুষ পাখি লম্বা ১৫ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ১০ সেন্টিমিটার। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা বড়। ঠোঁট লম্বা, বড়শির মতো বাঁকানো। পুরুষ পাখির কপাল উজ্জ্বল বেগুনি, তার ওপর হালকা ডোরা দাগ। মাথার পেছন থেকে পিঠ ও ডানার কিছু অংশ সিঁদুরে লাল। পিঠের শেষ থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত হলুদাভ-জলপাই। লেজ বেগুনি। থুতনি থেকে বুক পর্যন্ত সিঁদুরে লাল। পেটের দিকটা হলুদাভ-জলপাই। স্ত্রী পাখির শরীর জলপাই রঙের। লেজের প্রান্তর সাদা। প্রধান খাবার ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত। ভূমি থেকে দুই মিটার উঁচুতে গাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত গাছের ডালে থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।
বেগুনি-গলা মৌটুসি পাখিঃ বাংলাদেশের এক দুর্লভ প্রজাতির পাখি বেগুনি-গলা মৌটুসি। পুরুষ বেগুনি-গলা মৌটুসি পাখিদের গলায় চকচকে বেগুনি গলাবন্ধ। মাথায় চকচকে সবুজ টুপি। রোদের আলোতে এদের মাথা-গলা চকচক করতে থাকে। বিশেষ করে বেগুনি গলা থেকে যেন গোলাপি-বেগুনি দ্যুতি ছড়াতে থাকে। এ পাখিটির নজরকাড়া এ সৌন্দর্য্য দেখলে যে কারও চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। কিন্তু মেয়ে পাখিরা দেখতে বেশ সাদামাটা। এদের ইংরেজি নাম Purple-throated Sunbird বা Van Hasselt’s Sunbird। Nectariniidae পরিবারের এই সদস্যদের বৈজ্ঞানিক নাম Leptocoma sperta। ছোট্ট পাখি বেগুনি-গলা মৌটুসির দেহের দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ সেন্টিমিটার, যার মধ্যে ঠোঁটই প্রায় ১.৬ সেন্টিমিটার। এ প্রজাতির পাখির স্ত্রী ও পুরুষের চেহারায় কোনো মিল নেই।
বনের কিনারা, ছড়ার আশপাশ, বন লাগোয়া আবাদি জমি ও বাগানের ফুলে ফুলে বিচরণ করে নির্যাস পান করে এরা। আবার ছোট ছোট কীটপতঙ্গও খায়। সচরাচর একাকি বা জোড়ায় থাকে এরা। গায়ক পাখিটি মৃদু ‘চিপ্-চিপ্-চিপ্’ স্বরে ডাকে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী বেশ নীরব। পুরুষ প্রজননের সময় এবং বাসায় ডিম বা বাচ্চা থাকলে খুশিতে গাছের কোনো মগডালে উঠে ‘চিহুইট-চিহুইট, টুইট-টুইট-টুইট’ শব্দে গান গায়। ফেব্রুয়ারি-জুলাই মাস এদের প্রজননকাল।
এ সময় গাছের সরু শাখায় ঘাস, আঁশ, পাতা, বাকল, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে লম্বা থলের মতো ঝুলন্ত বাসা বানায়। বাসা বানানো হলে মেয়ে পাখি তাতে দু-তিনটি বাদামি ছিটযুক্ত ধূসর বা সবুজাভ সাদা ডিম পাড়ে। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে ১৪-১৫ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাসা বানানো ও ডিমে তা দেওয়ায় স্ত্রীকে সাহায্য না করলেও পুরুষ তার সুমধুর গানে সব সময় স্ত্রীকে উৎসাহ দেয়। তাছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে মিলেমিশে সে বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া ও লালন-পালন করে বড় করে তোলে। এ পাখিরা সাধারণত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। সিলেটের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে গেলে এদেরকে দেখা যায়।
বনের কিনারা, ছড়ার আশপাশ, বন লাগোয়া আবাদি জমি ও বাগানের ফুলে ফুলে বিচরণ করে নির্যাস পান করে এরা। আবার ছোট ছোট কীটপতঙ্গও খায়। সচরাচর একাকি বা জোড়ায় থাকে এরা। গায়ক পাখিটি মৃদু ‘চিপ্-চিপ্-চিপ্’ স্বরে ডাকে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী বেশ নীরব। পুরুষ প্রজননের সময় এবং বাসায় ডিম বা বাচ্চা থাকলে খুশিতে গাছের কোনো মগডালে উঠে ‘চিহুইট-চিহুইট, টুইট-টুইট-টুইট’ শব্দে গান গায়। ফেব্রুয়ারি-জুলাই মাস এদের প্রজননকাল।
এ সময় গাছের সরু শাখায় ঘাস, আঁশ, পাতা, বাকল, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে লম্বা থলের মতো ঝুলন্ত বাসা বানায়। বাসা বানানো হলে মেয়ে পাখি তাতে দু-তিনটি বাদামি ছিটযুক্ত ধূসর বা সবুজাভ সাদা ডিম পাড়ে। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে ১৪-১৫ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাসা বানানো ও ডিমে তা দেওয়ায় স্ত্রীকে সাহায্য না করলেও পুরুষ তার সুমধুর গানে সব সময় স্ত্রীকে উৎসাহ দেয়। তাছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে মিলেমিশে সে বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া ও লালন-পালন করে বড় করে তোলে। এ পাখিরা সাধারণত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। সিলেটের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে গেলে এদেরকে দেখা যায়।
মাকড়সাভুক মৌটুসিঃ মৌটুসি প্রজাতির মধ্যে এরা অপেক্ষাকৃত বড় এবং এদের ঠোঁট লম্বা ও অগ্রভাগ সরু। এদের গায়ের উপরিভাগের পালক সবুজ আর বুকের সম্মুখভাগ ধূসর আর লেজের দিকের পালক হলদেটে। ছোট মাকড়সা এবং পোকা মাকড়ের প্রতি এদের আসক্তি বেশি থাকলেও এরা মধুও খায়। এর ইংরেজি নাম little spiderhunter এবং বৈজ্ঞানিক নাম - Arachnothera longirostra. গ্রাম বাংলায় এই প্রজাতির মৌটুসী পাখির সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
** বিঃ দ্রঃ লেখাটিতে ব্যবহৃত সকল তথ্য এবং ছবি, ইন্টারনেট, বই মুক্ত কোষ/Open Source থেকে নেওয়া। দেশি ফটোগ্রাফারদের অনুমতিক্রমেই তাদের ছবিগুলো দেওয়া হয়েছে এখানে।
* লেখাটির মান উন্নয়ন করায় আপনার উপদেশ, সমালোচনা, অনুপ্রেরণা একান্তভাবে কাম্য।