মাথায় রয়েছে মোহনীয় একটি তেল চকচকে ঝুটি। গলার নিচ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দুধের মতোই শ্বেতশুভ্র। পেটও সাদা। পাখার নিচে কালো রেখা, শেষদিকে অল্প কালো ছোপ। বুক থেকে শুরু করে গলা, মাথা তেলচকচকে কালো। মাথায় এক দর্শনীয় চূড়া। একটু বাঁকানো নীলচে রঙের তীক্ষ্ণ ঠোঁট। চোখের মণিও নীলচে, কেন্দ্রে সূক্ষ্ম সাদা বিন্দু। পা হালকা লালচে। দুধরাজের স্বভাব বড্ড চঞ্চল। কোথাও দু মুহূর্ত স্থির থাকার ধৈর্য নেই। এই এসে বসল তো এই আবার উধাও। ফলে এর অমন চোখজুড়ানো রূপ যে একটু প্রাণভরে দেখবেন, সে উপায়ও নেই।
দুধরাজের প্রিয় খাবার কীটপতঙ্গ। উরন্ত পোকা মাকড় ধরতে এদের জুরি নেই। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ভয় পেলে ‘কই কোঁ..কি.. ই..ই..ই..ক্যাঁচ..’ শব্দে চেঁচিয়ে ওঠে। প্রজনন মৌসুমে মোলায়েম সুরে ডাকাডাকি করে। এরা পাঁচ ধরনের সুরে ডাকতে পারে। কোনোটিই শ্রুতিমধুর নয়। স্বভাবে চঞ্চল। সুন্দরবনের বনমোরগ ওদের বন্ধু। সর্বদাই বনমোরগ-মুরগীর সঙ্গে ওঠবস করে। কারণ বনমোরগ ওদের শক্ত ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁচিয়ে খাবার সংগ্রহ করার সময় পোকামাকড় উঠে এলে তা খায় দুধরাজ। অপরদিকে বনমোরগেরও স্বার্থ আছে দুধরাজকে কাছে রেখে। সাপ-বেজি, বনবিড়াল ইত্যাদি নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে কর্কশ শব্দ করে বন্ধুকে জানিয়ে দেয়। দুধরাজ শুধু সুন্দরবনে নয়, লোকালয়েও বাস করে। তবে একেবারেই কম।
শুধু রূপ দিয়ে তো চলে না, কঠিন দুনিয়ায় বাঁচতে হলে বুদ্ধি আর সাহসও থাকা চাই। তা পর্যাপ্ত আছে দুধরাজের। শত্রুভাবাপন্ন কেউ বাসার ধারেপাশে এলে যেন বাজ, ফিঙে বা অনেক বড় পাখিকেও এরা তাড়িয়ে বেড়ায়। সে কারণে অনেক নিরীহ পাখি এদের বাসার কাছে বাসা তৈরি করে।
সারা দেশে পাওয়া গেলেও পঞ্চগড় ও উত্তরাঞ্চলে তাদের বেশি দেখা যায়। দেখা যায় সুন্দরবনেও। ঘনঝোপ ঝাড় তাদের পছন্দের জায়গা। দুধরাজ প্রকৃতিতে কমে যাচ্ছে দিন দিন।